বিষাক্ত পোকা কামড়ালে
কোথাও বেড়াতে গেলেও পোহাতে হয় নানান পোকার অত্যাচার, বিশেষ করে বনে-বাদাড়ে। সেখানে জোঁক, বোলতা, বিচ্ছু তো আছেই! পোকামাকড়ের কামড় খেলে কী করলে আরাম পেতে পারেন এ বিষয়ে রইল কিছু পরামর্শ।
✧ মশা মোটামুটি অপ্রতিরোধ্য একটি পোকা। এর বিচরণ সর্বত্র! মশার কামড় থেকে বাঁচতে মশকুইটো ক্রিম বা লোশন ব্যবহার করুন। মশারি টানিয়ে ঘুমান। মশা অধ্যুষিত এলাকায় গেলে কালো পোশাক পরে যাবেন।
✧ পোকা যেখানেই কামড়াক না কেন কখনোই তা টেনে ছাড়ানোর চেষ্টা করবেন না। কারণ মুখের অংশ ছিঁড়ে শরীরে লেগে থাকলে সেখানে ক্ষত হয়ে যাবে, যা সারতে বহুদিন সময় লাগে। জোঁক সরাতে জোঁকের মুখের দিকে লবণ দিন। সাথে লবণ না থাকলে তামাকপাতার গুঁড়া (এমনকি সিগারেটের তামাকও) একই কাজ দেবে।
✧ মৌমাছি কামড়ালে সাথে সাথে সেই জায়গায় পেঁয়াজের রস ঘষে দিন। চিমটাজাতীয় জিনিস দিয়ে মৌমাছির হুলটা তুলে ফেলে দিন এবং সার্জিকাল স্পিরিট লাগিয়ে নিন।
✧ বোলতা কামড় দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে জায়গাটা বেশ জ্বালা করে এবং ফুলে যায়। তাই প্রচুর পরিমাণে পানি দিয়ে আক্রান্ত জায়গা ধুয়ে ফেলতে হবে। বরফ ঘষে দিন। এরপর ক্যালামাইন লোশন লাগান। বেকিং পাউডার পানি দিয়ে পেস্ট করে লাগালেও আরাম পাবেন।
✧ পিঁপড়া কামড়ালে গরম পানিতে লবণ মিশিয়ে আক্রান্ত স্থানে লাগান।
✧ বিচ্ছু বা বিছার কামড় অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক। কখনো কখনো মানুষ মারাও যেতে পারে! বিচ্ছু কামড়ালে যে জায়গায় কামড়েছে সেখানে সামান্য চিরে পানিতে সামান্য পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট মিশিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এরপর কোনো অ্যান্টিসেপ্টিক তুলা দিয়ে আক্রান্ত স্থানে লাগান। লবণ ও লেবুর রস একসঙ্গে মিশিয়ে লাগালেও উপকার পাবেন।
✧ ছোট বাচ্চাদের কান্না শুনে অনেক সময় মনে হয় তাদের কিছু কামড় দিয়েছে। কিন্তু কী কামড় দিয়েছে তা বোঝা যায় না। সেক্ষেত্রে জায়গাটা সাবান দিয়ে ভালো করে ধুয়ে ক্যালামাইন লোশন লাগিয়ে দিন। অলিভ অয়েলের সাথে ডিমের সাদা অংশ মিশিয়ে লাগালেও কাজ দেবে। পোকামাকড় ও মাকড়সা কামড় দিলে ছোটখাট ফোলা হয়, লাল হয়ে যায়, ব্যথা ও চুলকানি হয়। এইসব হালকা প্রতিক্রিয়াগুলো খুবই সাধারণ এবং কয়েক ঘন্টা থেকে কয়েক দিন স্থায়ী হয়। কিছু মানুষের ক্ষেত্রে পোকার কামড় বা হুল ফোটানোর ফলে তীব্র প্রতিক্রিয়া হতে পারে। বড়দের চেয়ে ছোটদের ক্ষেত্রে এই প্রতিক্রিয়ার প্রভাব বেশি দেখা যায়।
তীব্র প্রতিক্রিয়ার লক্ষণ সমূহ: কারো কারো ক্ষেত্রে পোকার কামড়ের ফলে তীব্র অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। যার ফলে জীবন আশংকার ও সৃষ্টি হতে পারে। তীব্র অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়ায় যে লক্ষণগুলো দেখা যায়-
পক্ষাঘাত হতে পারে যদি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গে সঠিক ভাবে রক্ত সঞ্চালন বাধাগ্রস্থ হয়। কফ, জোরে জোরে নিঃশ্বাস ফেলা, নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসে কষ্ট হওয়া, মুখে ও গলায় পূর্ণতার অনুভূতি হয়। ঠোঁট, জিহবা, কান, চোখের পাতা, হাতের তালু, পায়ের পাতার নীচের অংশ এবং মিউকাস পর্দা ফুলে যায়।
২। আন্ডারআর্ম ডিওডোরেন্টে যে উপাদান থাকে তা ত্বকের জ্বালাযন্ত্রণা কমাতে পারে।
৩। এক বা দুই ফোটা পিপারমেন্ট অয়েল বা মেন্থলের তেল আক্রান্ত স্থানে লাগান। এটি শীতলতা দান করতে পারে এবং আক্রান্ত স্থানে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে নিরাময়কে ত্বরান্বিত করে। বিকল্প হিসেবে মেন্থলের তেল সমৃদ্ধ টুথ পেস্ট লাগাতে পারেন।
৪। পেঁয়াজের একটি টুকরা হুল ফোটার স্থানে লাগালে ইনফেকশন ও ফোলা কমে যায়।
৫। অ্যাক্টিভেটেড চারকোল আক্রান্ত স্থানে লাগালে বিষ বাহির হয়ে যাবে।
৬। সাদা ভিনেগার বা আপেল সাইডার ভিনেগারও ব্যথা কমতে সাহায্য করে।
৭। কামড়ের স্থানে লেবুর রস লাগিয়েও উপকার পেতে পারেন।
৮। কামড়ের স্থানটি পানি দিয়ে ভিজিয়ে নিয়ে পুরোনো বার সাবান লাগিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সুগন্ধি ফ্যান্সি সাবান ব্যবহার করা যাবেনা। কারণ এতে যন্ত্রণা বাড়তে পারে।
১০। বাঁধাকপির পাতা মাকড়সার কামড়ের শক্তিশালী প্রতিকার হিসেবে কাজ করে। বাঁধাকপির কাঁচা পাতা পিষে নিয়ে কামড়ের স্থানে লাগিয়ে এর উপরে ব্যান্ডেজ লাগিয়ে সারারাত রেখে দিন। এর ফলে বিষ মুক্ত হয়ে দ্রুত নিরাময় হবে।
১১। হাইড্রোজেন পারঅক্সাইডের পতঙ্গের কামড়কে নিরাময় করতে পারে এবং এটিতে অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল উপাদান আছে। আক্রান্ত স্থানটি হাইড্রোজেন পারঅক্সাইডের দ্রবণ দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
১২। অলিভ অয়েল ও হলুদ গুঁড়া মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে আক্রান্ত স্থানে লাগান। মাকড়সার কামড়ের চুলকানি ও ফোলা কমাতে এটি অনেক কার্যকরী।
১৩। মাকড়সার কামড়ের স্থানটি পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে নিন এবং লবণ লাগান। আক্রান্ত স্থানে লবণ লাগিয়ে একটি ব্যান্ডেজ লাগিয়ে রাখতে পারেন।
১৪। রসুন স্লাইস করে কেটে আক্রান্ত স্থানে সরাসরি লাগান এবং ভালো ফল পাওয়ার জন্য অবশ্যই একটি ব্যান্ডেজ দিয়ে আটকে রাখুন সারারাত।
১৫। বিশেষ করে শিশুদের ইনফেকশন কমানোর জন্য অ্যান্টিবায়োটিক ক্রিম বা লোশন ব্যবহার করুন।
0 Comments