মানব দেহ ও রোগজীবাণু
পৃথিবীর জনসংখ্যা কম-বেশি সাতশত পঞ্চাশ কোটির মতো। আর এ সংখ্যা উচ্চারণের সাথে সাথে আমাদের চক্ষু চড়ক গাছ। যেন অজান্তেই বলে ফেলি, ওরে বাবা! অথচ আমার আপনার দেহ নামক পৃথিবীর বাসিন্দাদের সংখ্যা জানেন তো? মাত্র ১৮০ ট্রিলিয়ন! আর এ বসবাসকারীদের পরিচিতি? ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক ও এককোষী আদি প্রাণী। তাও আবার দশ হাজার ধর্মাবলম্বী! তবে এদের সম্মিলিতভাবে বলা হয় হিউম্যান মাইক্রোবায়োটা। এদের সম্মিলিত ওজন প্রকারভেদে আমাদের শরীরের এক থেকে দুই শতাংশ। আশার কথা_ এরাই আমাদের স্বাস্থ্য রক্ষায় প্রধান ভূমিকা পালন করে থাকে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট লুই সেন্টারের অধ্যাপক জর্জ উইনস্টন যথার্থই বলেছেন, "আমাদের দেহের বাসিন্দা তথা যেসব অতি ক্ষুদ্রপ্রাণ অণুজীব আমরা বহন করি সেগুলোর স্বভাব চরিত্র অর্থাৎ গোপন তথ্য না জেনে এদের গ্রেপ্তার বা হত্যা প্রচেষ্টা, যাকে ডাক্তারী ভাষায় চিকিৎসা বলা হয়, তা সম্ভব নয়। এদের অপরাধ তথা রোগের সাথে সম্পর্ক না জেনে গণগ্রেপ্তার বা দেখা মাত্র গুলির নির্দেশ দেহ প্রশাসনে কল্পনাতীত বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। আমাদের দেহে বসবাসকারী দশ হাজারের মতো ব্যাকটেরিয়া প্রজাতির অনেকেই আমাদের জন্য হুমকি স্বরূপ। যেমন দেহের সার্বভৌমত্বে অবিশ্বাসী 'কোহন' আমাদের মুটিয়ে যাওয়া, হাঁপানী এবং হৃদরোগের বিস্তার ঘটায়। এমনকি 'অবসেশন' বা 'মনমরা' করে তোলে। ব্যাকটেরিয়ার আধিপত্য বা প্রভাব রয়েছে ক্ষুধা কম-বেশিতে, খাদ্যের পরিমাণ নির্ধারণে এমনকি খাদ্য নির্বাচনী আগ্রহ সৃষ্টিতে। গৃহীত ঔষধ কত দ্রুত বিপাক হবে তাও এদের মর্জির উপর নির্ভরশীল। দেহ বিজ্ঞানীরা বলছেন, এ মাইক্রোবায়োটা উত্তেজিত হলে দেহ সাম্রাজ্যেও বিশৃঙ্খলা অবশ্যম্ভাবী। এতে ১৪৪ ধারা বা কার্ফু কোনো কাজেই আসবে না।
দেহ বিজ্ঞানীরা আজ নির্দ্বিধায় বলছেন, নির্বিচারে ব্যাকটেরিয়া দমন অভিযান দেহ প্রশাসনকে ভয়াবহভাবে ভুল পথে নিয়ে যাচ্ছে। দেহে রোগ সৃষ্টিকারী দেহদ্রোহী ব্যাকটেরিয়াকে দমন করতে গিয়ে বিশেষতঃ ঠা-া জ্বর-সর্দির বিরুদ্ধে অ্যান্টিবায়োটিক নামক যে 'কার্পেট বম্বিং' করছি, এতে আমরা জেদ বা অজ্ঞানতা বশতঃ আমাদের দেহে বসবাসকারী উপকারী জীবাণুগুলোকেও গাজা উপত্যকার নিরীহ ফিলিস্তিনি নারী ও শিশুদের মতো হত্যা করছি। জানা উচিত, অ্যান্টিবায়োটিক জাতীয় ঔষধ ঠা-া জাতীয় ভাইরাস দমনে অকেজো, তবুও আমরা দেদার গিলছি! যুক্তরাজ্যে পরীক্ষামূলক ১১,৫৩২ জন শিশুকে সাধারণ ঠা-াজনিত অসুস্থতায় অ্যান্টিবায়োটিক ঔষধ সেবন করতে দেয়া হয়। পাঁচ মাস পর দেখা গেলো, অন্যান্য শিশুদের তুলনায় এ ঔষধসেবী শিশুদের ওজন বেড়ে গেছে। মাত্র আটত্রিশ মাসে তাদের ওজন তুলনামূলকভাবে ২২ শতাংশ বেড়ে গেল। অ্যান্টিবায়োটিক বেশি ব্যবহারে শিশুরা মুটিয়ে যায়। আর একে ফুলে ফলে ভরে তোলে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ ইত্যাদি। কারণ অ্যান্টিবায়োটিকস্ মানব দেহের ভেতরে বসবাসকারী ব্যাকটেরিয়াকে পাল্টে দিয়ে দেহে কলোজৌল বৃদ্ধি করার ফলেই মানুষ মুটিয়ে যায়। আর এতে ভূমিকা রাখে মানব বা যে কোনো প্রাণী দেহের অন্ত্রে বসবাসকারী কামিকিউটস ব্যাকটেরিয়া।
বলে রাখা ভালো, চিকিৎসা বিজ্ঞানের অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষাও মানব জীবনের প্রতি হুমকি হিসেবে দেখা দিয়েছে। যেমন সিটি স্ক্যান। মাইকেল এ.পেট্টি, এম.ডি. নামক জনৈক মেডিসিন বিশেষজ্ঞ বলেছেন, এতে হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে বিস্ফোরিত পারমাণবিক বোমার তেজষ্ক্রিয়তার চেয়ে মানব দেহে ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি অন্তত দ্বিগুণ বেশি। বেদনা নাশক ঔষধপত্রের যথেচ্ছ ব্যবহার অনেকটা নিজগৃহে আগুন লাগাবার মতই বিপজ্জনক। আল্লাহপাক সকল প্রাণী সৃষ্টিশেষে ফেরেস্তা কুলকে বলেছেন, সকল সৃষ্টির মাঝে মানুষই সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি এবং মানব সৃষ্টির জন্য স্বয়ং আল্লাহপাক গর্বিত। সৃষ্ট জগতের তাবৎ বিস্ময়ের মাঝে মানব দেহই সবচে' বিস্ময়কর সৃষ্টি।
মানবদেহের অজানা তথ্য:
১। মানব দেহের স্নায়ুবিক তাড়নার গতি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন স্পোর্টস্ কারের গতি সম্পন্ন। স্নায়ুবিক তাড়নার গতি প্রতি ঘন্টায় ১৭০ মাইল।
২। মানব মস্তিষ্কের চালিকা শক্তি ১০ ওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন বৈদ্যুতিক বাল্্বের সমান।
৩। মানব মস্তিষ্কে কোষের তথ্য ধারণ ক্ষমতা ১০০০ টেরা বাইট। বৃটেনের গত ৯০০ বছরে ন্যাশনাল আর্কাইভস্-এর সংগ্রহকৃত তথ্যের পরিমাণ মাত্র ৭০ টেরাবাইট।
৪। মানব মস্তিষ্ক তার দেহের মাত্র শতকরা ২ ভাগ। অথচ রক্তনালীতে প্রবিষ্ট অঙ্েিজনের শতকরা ১০ভাগ মস্তিষ্ক ব্যবহার করে থাকে।
৫। দিবা ভাগের তুলনায় রাতেই মস্তিষ্ক অধিক সক্রিয় থাকে।
৬। মস্তিষ্কের নিউরোন বৃদ্ধি পায় পুরোটা জীবন।
৭। মস্তিষ্কে নিউরনের গতি সেকেন্ডে (অনুভূতির প্রকারভেদে) ০.৫ মিটার হতে ১২০ মিটার পর্যন্ত ক্রিয়াশীল।
৮। মস্তিষ্কের নিজস্ব কোনো ব্যথা ধারক (পেইন রিসেপ্টর) নেই। তবে ব্রেনের টিস্যু রক্তনালী এবং নার্ভ ব্যথা সংবেদনশীল বিধায় আমরা প্রায়শঃ মাথা ব্যথা অনুভব করি।
৯। মস্তিষ্কের মোট ওজনের শতকরা ৮০ ভাগই পানি। রং গোলাপী ও রক্তাভ হওয়াতে আমরা একে অনেকটা হালকা গোলাপী জেলীর মতো দেখি।
১০। মানব দেহে মুখের চুল অধিক বাড়ে। সারা জীবন দাড়ি না কাটলে তা ২০ ফুট লম্বা হতে পারে। একজন মানুষের মাথা হতে দৈনিক ৬০ হতে ১০০ টি চুল পড়ে। নারীদের চুলের ব্যাস পুরুষদের চুলের অর্ধেক মাত্র। একটি চুল ৩ হতে ৫ মাইক্রো গ্রাম ওজন বইতে পারে। গড়পরতা একজন মানুষের ১,০০,০০০ চুলের থলিকা (হেয়ার ফলিকল) রয়েছে এবং প্রতিটি থলিকায় ২০ টি করে চুল গজাতে পারে। সোনালী চুলওয়ালা নারীদের মাথায় চুলের সংখ্যা বেশি। তাদের ১,৪৬,০০০ চুলের থলিকা থাকে। মানুষের চুল ধ্বংস হয় না। প্রতিটি চুলের বয়স ৩ থেকে ৭ বছর। মানব দেহে চুলের পরিমাণ শিম্পাঞ্জীর মতো । তবে বেশিরভাগ চুলই খালি চোখে দেখা যায় না। চুল পড়ে আবার উঠে। না উঠলেই 'টাক'।
১১। সবচে' বেশি বাড়ে মধ্যমা আঙ্গুলের নখ। আর কড়ে আঙ্গুলের নখ সবচে' কম বাড়ে। পায়ের আঙ্গুলের নখের চেয়ে ৪ গুণ বেশি বাড়ে হাতের নখ।
১২। মানুষের ক্ষুদ্রান্ত্র তার দৈর্ঘ্যের চেয়ে চার গুণ বড়।
১৩। দ্রুত রক্ত সঞ্চালনের জন্য যে চাপের প্রয়োজন হয় তা আপনার রক্তকে ৩০ ফুট দূরে ছুড়ে দিতে পারে।
১৪। পাকস্থলীতে পরিপাক ক্রিয়ায় ব্যবহৃত হাইড্রোক্লোরিক এসিড স্টীল নির্মিত বেস্নডকেও গলিয়ে ফেলতে পারে। তাই বলে পেটের ভেতর রি-রোলিং ফ্যাক্টরী দিয়ে বসবেন না।
১৫। মানবদেহে রক্ত প্রবাহে ব্যবহৃত রক্তনালীর মোট দৈর্ঘ্য ৬০,০০০ মাইল।
১৬। প্রতি তিন থেকে চার দিনের মধ্যে পাকস্থলীর দেয়াল নতুন করে নির্মিত হয়। নতুবা পুরো পাকস্থলীই হজম হয়ে যেত।
১৭। ফুসফুসে রয়েছে হাজার হাজার ক্লোমনালী, ক্ষুদ্র আঙ্গুর সাদৃশ্য অ্যালভিওলী এবং কৈশিক নালী, যা রক্তে অঙ্েিজন সরবরাহে ব্যস্ত থাকে।
১৮। নারীদের হৃদপি- পুরুষের তুলনায় আয়তনে ছোট বিধায় অধিক স্পন্দিত হয়। নারীদের হৃদ আক্রমণ হলে পুরুষের তুলনায় তার ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া ভিন্ন বিধায় তার চিকিৎসাও পুরুষ হতে ভিন্নভাবে হয়ে থাকে।
১৯। মানবদেহের অঙ্গগুলোর মধ্যে যকৃত বা লিভার সবচে' বেশি পরিশ্রমী। যকৃত ৫০০ টিরও বেশি কাজ করে থাকে। উল্লেখযোগ্য হলো পিত্ত উৎপাদন, পরিত্যক্ত লোহিত রক্তকোষ বর্জন, প্লাজমা প্রোটিন সংশ্লেষণ, বিষ নষ্ট করা ইত্যাদি।
২০। দেহের মহাধমনীর আকার বাগানে জল ছিটানো হোস পাইপের মতো। দেহে অঙ্েিজন সমৃদ্ধ রক্ত সঞ্চালনে এটি ব্যবহৃত।
২১। ডান ফুসফুসের চেয়ে বাম ফুসফুস আকারে ছোট। হৃদপি- ফুসফুসের বাম দিকে থাকে। এর জন্যই এটি আকারে ছোট হয়ে থাকে।
২২। আপনার অভ্যন্তরীণ অঙ্গসমূহের কিছু অংশ কেটে বাদ দিলেও বেঁচে যাবেন। যেমন পাকস্থলী, প্লীহা, যকৃতের শতকরা ৮০ ভাগ, অন্ত্রের ৭৫ ভাগ; একটি কিডনি, একটি ফুসফুস। তবে অস্বস্তিতে ভুগতে হবে।
২৩। অন্তঃক্ষরা বা এড্রিনাল গ্রন্থি কিডনির ঠিক উপরে এর অবস্থান, যা আকার বদলায় পুরোটি জীবন। হরমন নির্গত করাই এর কাজ। সঙ্কুচিত হতে হতে বৃদ্ধ বয়সে এ গ্ল্যান্ডটি এতো ছোট হয় যে, তা ভালো ভাবে দেখাই যায় না।
২৪। হাঁচির গতিবেগ ঘন্টায় ১০০ মাইলের উপরে। আর কাশির গতিবেগ ৬০ মাইল।
২৫। পুরুষের তুলনায় নারীদের চোখের পলক পড়ে দ্বিগুণ। গড়পরতা একজন মানুষ প্রতি মিনিটে ১০ বার পলক ফেলেন।
২৬। কিডনি বা মূত্র থলির ধারণ ক্ষমতা ৪০০ থেকে ৮০০ সিসি। ২৫০ থেকে ৩০০ সিসি প্রস্রাব জমা হলেই চাপ শুরু হয়। মূত্রাশয়ের সুস্থতার উপর নির্ভর করে আপনার দেহের অভ্যন্তরীণ পরিচ্ছন্নতা এবং সুস্থতা।
২৭। মানব বর্জ্যের শতকরা ৭৫ ভাগই জল।
২৮। মানুষের পায়ে ৫,০০,০০০-এর বেশি শ্বেদগ্রন্থি বা সুইটগ্লান্ড রয়েছে, যা দিনে ২ লিটারেরও বেশি ঘাম উৎপাদন করতে পারে।
২৯। মানব জীবনে জিহ্বা হতে যে থুথু বের হয় তা দিয়ে দুটি সুইমিংপুল ভরা যায়।
৩০। মানুষের কানের ভেতর খৈল উৎপাদিত হয় ব্যাকটেরিয়া, ফাঙ্গাস, ময়লা এবং পোকামাকড়ের হাত হতে কানকে রক্ষার জন্য।
৩১। অতিরিক্ত খাবার খেলে আপনার স্মরণশক্তি আনুপাতিক হারে কমে যাবে।
৩২। পৃথিবীর এক তৃতীয়াংশ মানুষের দৃষ্টি ২০-২০।
৩৩। জিহ্বার লালা শুকিয়ে গেলে খাদ্যের স্বাদ অনুভূত হয় না।
৩৪। গন্ধ নেয়ার ব্যাপারে নারীরা পুরুষের তুলনায় অধিক পারদর্শী।
৩৫। মানুষের নাক ৫০,০০০ ভিন্ন ধরনের গন্ধ শনাক্ত করতে পারে। কুকুর পারে কয়েক লক্ষ।
৩৬। সামান্য শব্দও মানুষের চোখকে স্ফীত করে।
৩৭। যমজ ছাড়া প্রতিটি মানুষের দেহের গন্ধ আলাদা।
৩৮। মৃত্যুর পর নখ ও চুলের বৃদ্ধি থেমে যায়।
৩৯। মানুষের বয়স ৬০ বছর পার হলে জিহ্বার স্বাদ কোষ প্রায় অর্ধেক কমে যায়।
৪০। জন্মের পর চোখের বৃদ্ধি না হলেও নাক ও কান অন্যান্য অঙ্গ প্রত্যঙ্গের মতো বাড়তে থাকে।
৪১। বয়স ৬০ হলে শতকরা ৬০ ভাগ পুরুষ এবং ৪০ ভাগ নারী ঘুমে নাক ডাকে। আর এ নাক ডাকার শব্দ ৬০ ডেসিবেলের মতো। ৮০ ডেসিবেল কংক্রিটের উপর হাতুড়ি পেটানোর শব্দের মতো।
৪২। জন্মের সময় শিশুর মাথা দৈর্ঘ্যে শরীরের ৪ ভাগের ১ ভাগ থাকে। ২৫ বছরে এর দৈর্ঘ্য শরীরের আট ভাগের এক ভাগ। এর পর মাথা আর বৃদ্ধি পায় না।
৪৩। ১০ বছর ব্যাপী এক জরিপে দেখা গেছে সপ্তাহের অন্যান্য দিনের তুলনায় হৃদআক্রমণে সোমবারের মৃত্যু হার শতকরা ২০ ভাগ বেশি।
৪৪। শতকরা ৯০ ভাগের বেশি রোগ হয় মানসিক চাপের কারণে।
৪৫। শিরশ্ছেদ করার পর বিচ্ছিন্ন মাথাটি ১৫/২০ সেকেন্ড সচেতন থাকে।
৪৬। মৃদু হাসতে ১৭টি এবং ভ্রুকুটি করতে ৪৩ টি পেশীর দরকার পড়ে। সুতরাং কাউকে ভ্রুকুটি করবেন না।
৪৭। প্রতিটি শিশু ৩০০টি হাড় নিয়ে জন্মায়। প্রথমে অনেক হাড়ই বড় হাড়গুলোর অংশ হিসেবে থাকে। পরে জোড়া লাগে। পরিণত বয়সে হাড়ের পরিমাণ দাঁড়ায় ২০৬টি।
৪৮। সন্ধ্যার তুলনায় সকালে আমাদের উচ্চতা ১ সে.মি. বেশি থাকে। দিনের বেলায় বসে থাকা বা দাঁড়ানো অথবা ভারী জিনিস বহনের ফলে হাড় সঙ্কুচিত হয়।
৪৯। মানব দেহের সবচে' বেশি শক্তিশালী পেশী হচ্ছে জিহ্বা। তবে জিহ্বাকে সংযত রাখবেন। নয়তো ও মাস্তান হয়ে যাবে।
৫০। হাড়ের মধ্যে চোয়ালের হাড় সবচে' বেশি শক্ত।
৫১। একবার পা ফেলতে ২০০টি পেশীর সাহায্য প্রয়োজন।
৫২। প্রাণী দেহের দাঁতই এক মাত্র অঙ্গ যা নিজকে মেরামত করতে পারে না। দাঁতের বাইরের স্তর এনামেল যা জীবন্ত টিস্যু নয়।
৫৩। কোন কোন ইস্পাতের তুলনায় হাড় অধিক শক্ত। তবে সর্বক্ষেত্রে নয়। ইস্পাতের পিএসআই- ৭০,০০০ আর আপনার হাড়ের ২০,০০০।
৫৪। আপনার হাড়ের প্রায় চার ভাগের এক ভাগ পায়ে। পায়ের হাড়ের পরিমাণ ৫২টি।
৫৫। আমাদের ত্বকের প্রতি বর্গ ইঞ্চিতে ৩২ মিলিয়ন ব্যাকটেরিয়া বসবাস করে। ভীত হওয়ার কারণ নেই। এদের বেশির ভাগই আমাদের ভোট দান করে। স্বাস্থ্য রক্ষায় তথা ক্ষমতায়নে বা কখনও লুটপাটে সাহায্য করে। এদের মোট সংখ্যা ১৮০ ট্রিলিয়ন মাত্র!
৫৬। প্রতি ২৭ দিনে মানুষ তার বহিঃ ত্বক পরিবর্তন করে নতুন চামড়া পরিধান করে। এ যেন বিলাসী মানুষের পরিধেয় বদল।
৫৭। মানব দেহে কোষের পরিমাণ ৫০ ট্রিলিয়ন। প্রতি মিনিটে মরে যায় ৩০০ মিলিয়ন। ভয় পাবেন না। গজায় সম পরিমাণ। কম জন্মালে শুকিয়ে যাবেন। বেশি জন্মালে মোটা।
৫৮। প্রতি মিনিটে আমরা হারাচ্ছি ৬,০০,০০০ ত্বক কণা। ঘাবড়াবেন না। আপনার ত্বক নিজকে নবায়ন করছে।
৫৯। একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ তার দেহে ৩০০ বিলিয়ন কোষ তৈরি করে এবং সমপরিমাণ হারায়।
৬০। প্রতিটি মানুষের আঙ্গুলের ছাপ আর জিহ্বার ছাপ আলাদা।
৬১। আপনার দেহে যে লোহা আছে, তা দিয়ে ৩ ইঞ্চি লম্বা একটি পেরেক বানাতে পারেন।
৬২। আপনার শরীরে যে পরিমাণ কার্বন আছে তা দিয়ে দশ হাজার কাঠ পেন্সিল বানাতে পারেন। দেখুন আবার ফ্যাক্টরী দিয়ে বসবেন না।
৬৩। পৃথিবীর বেশির ভাগ মানুষের রক্তের গ্রুপ 'ও'। এটি অতীব মূল্যবান গ্রুপ। এ রক্ত 'এ' এবং 'বি' গ্রুপের রক্ত বিশিষ্ট মানুষের রক্তের বিকল্প।
৬৪। মানুষের ঠোঁটের নিচে অনেকগুলো কৌশিক নালী থাকে বিধায় ঠোঁট লালচে দেখায়।
৬৫। ঘুমোবার জায়গা যতো বেশি ঠা-া হবে মানুষ ততো বেশি স্বপ্ন দেখবে।
৬৬। চোখের পানিতে ও শ্লেষ্মায় লাইসোজাইম নামক এনজাইম থাকার কারণে ব্যাকটেরিয়া চোখের ক্ষতি করতে পারে না।
৬৭। মাত্র ৩০ মিনিটে আমাদের দেহ হতে যে উত্তাপ বেরোয় তা দিয়ে আধা গ্যালন পানি সেদ্ধ করা যায়।
৬৮। মানুষের মনে ভীতি উৎপন্ন হলে দেহ হতে রাসায়নিক দ্রব্য ও হরমন নির্গত হয়।
৬৯। মানুষ নিজকে কাতুকুতু দিলে অন্যের দেয়া কাতুকুতুর মতো সুড়সুড়ি জাগে না। কারণ আপনার মগজই বলে দেয় কাজটি আপনি নিজেই করছেন।
৭০। মানুষের প্রসারিত বাহুদ্বয়ের দৈর্ঘ্য প্রায় তার উচ্চতার সমান।
৭১। মনের আবেগে মানুষই কাঁদতে পারে। অন্যান্য প্রাণী যা করে তা কাতর চিৎকার।
৭২। বাঁহাতি মানুষদের গড় আয়ু ডানহাতি মানুষদের তুলনায় প্রায় দশ বছর কম।
৭৩। হরমোনের ভিন্নতার কারণে নারীদের মেদ হ্রাস তুলনামূলকভাবে পুরুষের চেয়ে কম। তাই নারীদের মেদ প্রবণতা বেশি।
৭৪। প্রাণী কুলের মাঝে মানুষ, বানর এবং কোয়ালাদেরই আঙ্গুলের ছাপ গ্রহণ করা যায়।
৭৫। দি জার্নাল অব এপিডেমিওলোজী এন্ড কম্যুনিটি হেলথ (লন্ডন)-এর মতে, শিশু ও কিশোরদের দিন ও রাতের নির্দিষ্ট সময়ে নির্বিঘ্নভাবে ঘুমোতে দেয়া উচিত। অন্যথায় তাদের বুদ্ধিবৃত্তিক সমস্যা দেখা দেয়।
৭৬। যাদের কিডনি রোগ রয়েছে তারা ফসফরাস জাতীয় খাদ্য এবং ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ ঔষধ পরিহার করা অতীব জরুরি। কারণ এতে মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ায় ২২%। (সূত্র : দি ল্যানসেট, ১৯ জুলাই ২০১৩)
৭৭। দুধ চিনি মেশানো চায়ের তুলনায় সবুজ চা বেশি স্বাস্থ্যকর। এতে রয়েছে ক্যান্সার বিরোধী ক্যামোমিল, জারকরোধী এপিজেনিন-এর উচ্চ উৎস।
৭৮। মিসিগান স্টেট ইউনিভার্সিটির গবেষকরা পরীক্ষা করে দেখিয়েছেন যে, ছেলে সন্তানেরা মায়ের বুকের যে দুধ পান করে, তাতে শতকরা ২.৮ ভাগ চর্বি থাকে। আর মেয়ে শিশুরা যে দুধ পান করে তাতে চর্বি থাকে শতকরা ০.৬ ভাগ।
৭৯। মেয়ে শিশুর তুলনায় ছেলে শিশুর মৃত্যুর সম্ভাবনা শতকরা ২৫ ভাগ বেশি।
৮০। বয়স্ক পুরুষের মস্তিষ্ক নারীদের চেয়ে শতকরা ১০ ভাগ বড়।
৮১। কাজ করার সময় পুরুষদের মস্তিষ্কের এক পাশের অংশ মনোযোগী হয় আর নারীদের মনোযোগী হয় মস্তিষ্কের উভয় পাশ।
৮২। মাতৃগর্ভে প্রথম ৬ সপ্তাহ প্রতিটি শিশুই (ভ্রুণই) নারী শিশু হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথমত এটি মায়ের ডিএনএ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে। ৬ সপ্তাহ পার হলে ভ্রুণটি যদি পুরুষ হয় তাহলে ওয়াই ক্রোমজমের এসআরওয়াই জিন এন্ড্রোজেন উৎপাদন শুরু করে। টেস্টাটোরন উৎপন্নের ফলে পুরুষোচিত বৈশিষ্ট্যের ক্রম বিকাশ ঘটে এবং ফলে পুরুষ শিশু হিসেবে ভূমিষ্ট হয়।
৮৩। মেয়েদের তুলনায় ছেলেদের আত্মলীনতার (অটিজম) সম্ভাবনা ৩ থেকে ৪ গুণ।
৮৪। একজন প্রাপ্ত বয়স্ক নারীর তুলনায় পুরুষের পেশীর ভার শতকরা ৫০ ভাগ বেশি। অথচ চর্বি শতকরা ৫০ কম।
৮৫। ২০০৮ সালের প্রাপ্ত তথ্য মতে, যুক্তরাষ্ট্রে ১,৪১,০০০ পিতা রয়েছেন যারা ঘরে বসে শিশু প্রতিপালন করেন। স্ত্রীগণ অফিসে কাজ করেন।
৮৬। নারীদের চেয়ে পুরুষরা দ্বিগুণ আত্মহত্যা প্রবণ। নারীরা মৃত্যুকে বেশি ভয় পায়।
৮৭। কথায় বলে "খাদ্যের অাঁশ, বেঁচে থাকার শ্বাস" অাঁশ যুক্ত খাবার ডায়াবেটিস, ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম এবং রক্তে কোলেস্টেরেলের উচ্চমাত্রা প্রতিরোধ করে। ডাল, বার্লি, ওট, কলা, আঙ্গুর, আপেল, নাশপাতি, আতা, আম, লিচু, জাম, জামরুল, লেবুর রস, বেদানার রস, মিষ্টি আলু, টমেটো, গাঁজর, কচু, পেঁয়াজ, বাদামে অাঁশ আছে, যা আপনাকে সুস্থ রাখবে।
৮৮। সুপারি ও চুন ছাড়া পান উদরাময় প্রতিরোধী। সুপারির রস যে কোনো মাদক হতে ক্ষতিকর।
৮৯। প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষদের দৈনিক ৩৫-৫০ গ্রাম আর নারীদের জন্য ২৫-৩০ গ্রাম অাঁশ জাতীয় খাদ্য প্রয়োজন।
৯০। যেসব খাবার খেলে তাড়াতাড়ি রক্তে গ্লুকোজ বেড়ে যায়, সে সব খাবার ব্রন বাড়ায়। যেমন, মিষ্টি, কোল্ড ড্রিংকস্, আইসক্রীম, ফাস্ট ফুড ইত্যাদি।
৯১। পৃথিবীতে বর্তমানে জীবনঘাতী ৬৭টি রোগের মাঝে উচ্চ রক্তচাপজনিত সমস্যা প্রথম স্থান অধিকার করে আছে।
৯২। বিশ্বে প্রায় এক কোটি লোক উচ্চ রক্ত চাপজনিত সমস্যার শিকার। এদের প্রায় ৭ শতাংশ লোক পঙ্গুত্ব বরণ করে থাকে।
৯৩। রান্নায় তিলের তেল আর তুষের তেল ব্যবহার করলে/ খেলে মাত্র ৬০ দিনে বস্নাড কোলেস্টরেল কমে ২৬ শতাংশ।
৯৪। যারা হাসিখুশি থাকে তাদের হৃদরোগ, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের ঝুঁকি কম এবং রক্তপ্রবাহে ক্যান্সার প্রতিরোধী ক্যারোটিনয়েডের মাত্রা বাড়ে।
৯৫। চোখে গ্লুকোমার ঝুঁকি এবং চোখ ভাল রাখার জন্য ভালো উপায় হলো থানকুনি পাতা, ধনেপাতা, লেটুস, বাঁধা কপি ইত্যাদি খাওয়া।
৯৬। হঠাৎ দুর্বলতাবোধ, মুখ বা শরীরের একাংশের অবশ বোধ, হঠাৎ চোখে ঝাপসা দেখা, হাঁটাচলায় ভারসাম্যহীনতা বোধ স্ট্রোকের লক্ষণ।
৯৭। দৈহিক ব্যায়াম এবং মানসিক উদ্দীপনামূলক কাজ কর্ম ৬০ বা ৭০-এর বেশি বয়সী লোকদেরকে স্মৃতিভ্রংশ রোগের হাত হতে বাঁচায়।
৯৮। কাশি হলেই অ্যান্টিবায়োটিক খাবেন না। কারণ কফ সৃষ্টিকারী শ্বাসনালীর সংক্রমণের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবায়োটিক খুব বেশি কার্যকর নয়। বরং এটা আপনার কিডনিকে হাসপাতালে পাঠাবে।
৯৯। কাশি ব্যাকটেরিয়া নয় ভাইরাস দ্বারা ঘটে। অ্যান্টিবায়োটিক ভাইরাস দমাতে পারে না। কাশি এবং সংক্রমণ এমনিতেই সেরে যায়।
১০০। দেহের অতিরিক্ত ওজন স্তন ক্যান্সার, মলান্ত্র, খাদ্যনালী, কিডনী এবং অগ্ন্যাশয়ে ক্যান্সার সৃষ্টি করে। এতে বহুমূত্র রোগও দেখা দেয়।
১০১। ধূমপানজনিত কারণে যতো লোক ক্যান্সার আক্রান্ত হয়েছে, তারচে' বেশি হয়েছে স্থূলতার জন্য।
সবশেষে বলতে চাই, সুস্থ থাকার জন্য চাই সুস্থ চিন্তা, শারীরিক ব্যায়াম, পরিমিত খাদ্য এবং মানসিক চাপমুক্ত জীবন। যেহেতু মানুষ প্রাকৃতিক জীব, তাই প্রাকৃতিক উপকরণের উপর নির্ভর করতে শিখুন। আপনি সুস্থ থাকতে চাইলে সুস্থ চিন্তা করুন।
0 Comments