শিশুর শীতকালীন রোগ, জেনে নিন লক্ষণ ও প্রতিরোধ
হাজার মাইল পথ পাড়ি দিয়ে আসা পাখিগুলো শীত সম্পর্কে জানান দিচ্ছে আপনাকে। মনে মনে সাজিয়ে ফেলছেন শীতে কোথায় কোথায় ঘুরতে যাবেন। রাফিনও এমন একটা পরিকল্পনা করে রেখেছে এবার শীতে সে সুন্দরবন ঘুরতে যাবে। বাবার অফিসের ছুটিও সেভাবে নেওয়ার জন্য আগে থেকেই বলে রেখেছে। এর মধ্যে রাফিনের দু-একজন বন্ধুও তাদের সাথে যাওয়ার বন্দোবস্ত করে ফেলেছে। দুঃখের বিষয় দু’দিন বাদেই সব পরিকল্পনা ভেস্তে গেল যখন কিনা রাফিনের ছোট ভাই ঠাণ্ডাজনিত কারণে অসুস্থ হয়ে পড়ল। শীতকালে আমরা প্রায় ঠাণ্ডাজনিত কারণে অসুস্থ হয়ে পড়ি। যার প্রভাব আমাদের স্বাস্থের উপর পড়ে, ভেস্তে যায় সব পরিকল্পনা।
শীতকালে ঠান্ডা তাপমাত্রা ও যে সব সংক্রমণ আপনাকে অসুস্থ করে তোলে সে সম্পর্কে জানা থাকলে মুক্তি পাওয়া সম্ভব হতে পারে ঐ সমস্ত রোগ থেকে । চলুন আমরা খুজে বের করি সে সমস্ত ঠান্ডাজনিত রোগগুলো, জেনে নেয় সে সম্পর্কে।
সাইনোসাইটিস
উপসর্গ
প্রতিরোধ
ঠাণ্ডা ও অ্যালার্জির কারণে এ রোগ বেশি হয়ে থাকে। তাই আপনার উচিত এগুলো থেকে দূরে থাকা। ধূমপানের অভ্যাস থাকলে আজ থেকেই ছাড়তে চেষ্টা করুন। দূষিত পরিবেশে এ রোগের অন্যতম কারণ। আপনার পরিবার নিয়ে যথাসম্ভব স্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস করুন। ঘুমানোর সময় মাথা উচু করে ঘুমানোর অভ্যাস করুন।
প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে ভুলবেন না।
সর্দি
বিরক্তিকর এক অসুখের নাম সর্দি। জীবনে সর্দি হয়নি এমন মানুষ পৃথিবীতে দ্বিতীয়টি খুজে পাওয়া ভার। সার বছরই এ রোগ হতে পারে তবে শীতকাল আসলে এ রোগের প্রকোপ আরও বেড়ে যায়। শিশুরা এ রোগে বেশি আক্রান্ত হয়। বয়স্ক মানুষ বছরে ২-৩ বার আর শিশুরা বছরে ৬ থেকে ১২ বার সর্দির ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে থাকে। সর্দি থেকে বাচ্চাদের নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন জটিল রোগের সৃষ্টি হতে পারে।
রোগের কারণ
বিভিন্ন ধরণের ভাইরাসের সংক্রমণে এরোগ হয়। প্রায় ২০০ প্রকার ভাইরাসের কারণে এ রোগ হয়ে থাকে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ‘রাইনো ভাইরাস’ এ জন্য দায়ী। অন্যান্য ভাইরাসের মধ্যে রয়েছে কোরোনা ভাইরাস, রেসপিরেটরি সিনসাইটিয়াল, প্যারা ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস প্রভৃতি।
লক্ষণ
রক্ষা পাওয়ার উপায়
কিছু সর্তকতা অবলম্বন করলে সর্দির মত বিরক্তিকর রোগ থেকে আমরা সহজেই রক্ষা পেতে পারি।
সাধারণত সপ্তাহখানেকের মধ্যে এ রোগ থেকে মুক্তি মিলে। কিন্তু তার থেকে বেশি স্থায়ী হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
ইনফ্লুয়েঞ্জা
সর্দিকাশি, জ্বর ইনফ্লুয়েঞ্জার প্রাথমিক কারণ হতে পারে। মাথাব্যাথার সাথে জ্বর বাড়তে পারে এ রোগে। থাকতে পারে গলা ব্যাথা ও পেশি ব্যাথা। এমন লক্ষণ ৩-৫ দিনের বেশি হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। অনেকে এটাকে গুরুত্ব দেয় না ফলে ইনফ্লুয়েঞ্জা ধীরে ধীরে নিউমোনিয়ায় রূপান্তর হতে পারে। বিশেষ করে বয়স্ক ও শিশুদের ক্ষেত্রে শীতকালে একটু বেশি সর্তকতা অবলম্বন করা উচিত।
প্রতিরোধ
ইনফ্লুয়েঞ্জার হাত থেকে বাঁচতে কিছু সর্তকতা অবলম্বন করা যেতে পারে। ধূলাবালি থেকে দূরা থাকার চেষ্টা করা, হাচিঁ কাশির সময় রুমাল ব্যবহার করা। খাবারের পূর্বে অবশ্যই ভালোভাবে হাত ধোঁয়া। ঠান্ডা থেকে নিজেকে দূরে রাখুন।
আক্রান্ত ব্যাক্তিকে বেশি বেশি তরল জাতীয় খাবার খেতে দিতে হবে। প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করতে হবে।
নিউমোনিয়া
নিউমোনিয়া সংক্রমনে ফুসফুসের প্রদাহ ঘটে। নিউমোনিয়া একটি সংক্রামক রোগ। শীতকালে ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমনে এ রোগের প্রকোপ বাড়ে। হৃদরোগ, ক্যানসার, হাঁপানির মত দীর্ঘমেয়াদি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি ও বাচ্চাদের নিউমোনিয়া হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। নিউমোনিয়ায় অক্রান্ত ৫ বছরের কম বয়সী শিশু শতকরা ২২জন মারা যায়।
লক্ষণ
জ্বর ও কাশি এরোগের প্রধান লক্ষণ। রোগীর শরীর বেশ দূর্বল হতে পারে। কোন কোন ক্ষেত্রে বিশেষ করে বয়ষ্করা অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে। লক্ষণ হিসাবে এরোগে আক্রান্ত ব্যক্তির শ্বাসকষ্ট হতে পারে। হতে পারে ডায়রিয়া। আক্রান্তের কোন একপর্যায়ে বমি বমি ভাব, ক্ষুদামন্দা দেখা দিতে পারে।
প্রতিরোধ
চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী প্রতিষেধক মূলক ভ্যাকসিন নিতে হবে। যথাসম্ভব ঠাণ্ডা থেকে দূরে থাকা। হাঁচি বা কাশি দেওয়ার সময় রুমাল বা মাস্ক ব্যবহার করা কেননা এরোগের জীবাণু আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি কাশি মাধ্যমে ছড়ায়। পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। খাবারের পূর্বে অবশ্যই হাত পরিষ্কার করতে হবে। প্রয়োজনে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে।
0 Comments